পাহাড়ে সৌন্দর্যের লীলাভূমি!
নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের দর্শনীয় জেলাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি জেলা হচ্ছে খাগড়াছড়ি। পাহাড়-পর্বত, ঝর্না বেষ্টিত এই জেলাটি সারা বছরই দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে। দৃষ্টিনন্দন ও রহস্যঘেরা বিভিন্ন স্থানের কারণেই পর্যটকদের কাছে এতো প্রিয়। তেমনই একটি দর্শনীয় পর্যটন কেন্দ্র হলো আলুটিলা।
খাগড়াছড়ি শহর হতে ৭ কিলোমিটার পশ্চিমে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা পযর্টন কেন্দ্রে রয়েছে একটি রহস্যময় গুহা। স্থানীয়রা একে বলে মাতাই হাকড় বা দেবতার গুহা।
এটি একটি চমৎকার পিকনিক স্পট। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। আলুটিলা খাগড়াছড়ি জেলার সব চাইতে উঁচু পর্বত। নামে এটি টিলা হলেও মূলত এটি একটি পর্বতশ্রেনী। খাগড়াছড়ি শহরের বেশ কিছুটা অংশ এখান থেকে দেখা যায়। শুধু তাই নয় পাহাড়ের সবুজ আপনার নজর কেড়ে নেবে। আকাশ পাহাড় আর মেঘের মিতালী দেখে সত্যিই বিমোহিত হবেন।
পূর্বে নাকি এই পাহাড়টির নাম ছিল আরবারী পর্বত। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই জেলাটিতে খাদ্যাভাব দেখা দিলে এখানকার মানুষ এই পাহাড় হতে আলু সংগ্রহ করে খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। সেই থেকেই লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে এই স্থানটির নাম এখন আলুটিলায় রূপান্তরিত হয়েছে।
আলুটিলা রহস্যগুহায় যেতে হলে দর্শনার্থীদের পর্যটন কেন্দ্রের নির্ধারিত টিকেট কাটতে হয়। প্রবেশের শুরুতেই বিশাল দুটি বটবৃক্ষ দর্শনার্থীদের স্বাগতম জানানোর জন্য শতবর্ষ ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
পর্যটন কেন্দ্রের প্রবেশ মুখ থেকে ডান ও বাম দু-দিকে দুটি রাস্তা রয়েছে। বাঁ দিকের রাস্তাটি দিয়েই মূলত রহস্য গুহায় যাওয়া যায়। আপনি চাইলে ডান দিকের রাস্তাটি ধরে কিছুটা এগিয়ে বাড়তি আনন্দ উপভোগ করতে পারেন।
পর্যটন কেন্দ্রের মূল গেটের ডান দিক দিয়ে যে রাস্তাটি রয়েছে সেই পথ ধরে কিছুটা সামনের দিকে গেলেই চোখে পড়বে চিকন একটি পাহাড়ীপথ। এটি নিচের দিকে নেমে গেছে। এই পথটি ধরে নিচে নামলে প্রথমে ছোট আকারের একটি ঝর্না। এবার ফটক হতে বাঁ দিকের রাস্তা দিয়ে কিছুটা এগুলোই দেখা মিলবে সেই রহস্যগুহার। গুহার মুখে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে একটি বিশ্রামাগার। বিশ্রামাগারের সামনে থেকে সোজা একটি পথ গুহার মুখে গিয়ে মিলেছে।
গুহার ভেতরে পূর্বে অবশ্যই দর্শনার্থীদের মশাল সংগ্রহ করে নিতে হবে অথবা মাথায় হেডলাইট ওয়ালা ক্যাপ সাথে করে নিতে হবে। কেননা গুহার ভিতরে সূর্যের আলোর বিন্দুমাত্রও পৌঁছায় না। গুহার মুখে গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে হবে। ধাপে ধাপে ৩৪০টি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামলে দেখা মিলবে সেই রহস্যময় গুহার।
ভেতরে ঢোকার পর যে কারোরই গাঁয়ে কাটা দিতে বাধ্য। তাই ভীত না হয়ে ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। উল্লেখ্য এখানে অন্য কোনো জীব-জন্তুর ভয় নেই। মূলত এর নিচ দিয়ে একটি ঝর্না প্রবাহিত হওয়ার কারণে পর্যটকদের অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বণ করতে হয়।
গুহার ভেতরের পথ ধরে কিছুটা এগোলে দু’দিকে দুটো রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে একটি রাস্তা বন্ধ। সোজা যে রাস্তাটা রয়েছে সেটি ধরেই এগোতে হবে। আপনি চাইলে বন্ধ রাস্তাটিতেও ঘুরে আসতে পারেন। মাঝপথে গুহাটির উচ্চতা স্বাভাবিকের চাইতে কম হওয়ায় পর্যটকদের মাথা নুইয়ে চলতে হয়।
গুহাটির মোট দৈর্ঘ্য ৩৫০ ফুট। গুহার এপাশ থেকে ওপাশে যেতে সময় লাগে মোটামুটি ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মতো।অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত এই গুহাটি দেখে যে কারোরই ভালো লাগতে বাধ্য।
ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিজেদের মতো করে ঘুরে আসতে পারেন নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলা নিকেতন, নানা বৈচিত্র্য, পাহাড়ী ঝর্ণাধারা আর সবুজের সমাহারপূর্ণ খাগড়াছড়ির দেবতার গুহা থেকে।